কম্পিউটারের যে বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকা আবশ্যক
মানুষ যুগে যুগে বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কার করে আসছে। তার মধ্যে কম্পিউটার অন্যতম একটি ডিভাইস। একবিংশ শতাব্দীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস হল কম্পিউটার। কি না করা যায় এই কম্পিউটার দিয়ে। জটিল হিসাব নিকাশ ছাড়াও আরও অনেক কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে। ছবি, ভিডিও এডিটিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি , যোগাযোগ, গাণিতিক সমাধান সবই করা যায় এই কম্পিউটার দিয়ে। শিক্ষাজীবন হল সবচেয়ে উত্তম সময় এই সময় কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন করতে পারে একজন শিক্ষার্থী। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলোর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান থাকাটাও জরুরি। একবার কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলে নতুন করে কিছু শিখার সময় পাওয়া যায় না। তাই এখনই সময় কম্পিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান নেয়ার।
এখন আসা যাক চাকুরীপ্রার্থীদের কথায়, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অফিসের বেশিরভাগ কাজই কম্পিউটার নির্ভর। তাই চাকুরী জীবনে টিকে থাকতে হলে কম্পিউটার সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকাটা জরুরি। এখন এমন কোন চাকুরির বিজ্ঞপ্তি নেই যেখানে কম্পিউটার দক্ষতা চাওয়া হয় না। ফলে যাদের কম্পিউটার সম্পর্কে সাধারন জ্ঞান নেই তারা অনেক চাকুরিতে আবেদন করতে পারে না। তাই যাদের কম্পিউটার সম্পর্কে একটুও জ্ঞান নেই তাদের জন্য এই আর্টিকেল।
চলুন জেনে নেয়া যাক কম্পিউটার সম্পর্কে আপনার কি কি জ্ঞান বা দক্ষতা থাকা দরকার।
১। বেসিক অপারেটিং সিস্টেম
আপনি যদি একজন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা ছাত্রী অথবা চাকুরীপ্রার্থী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বেসিক অপারেটিং সম্পর্কে ধারনা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেসিক অপারেটিং সিস্টেম বলতে বুঝানো হচ্ছে কম্পিউটার চালু বন্ধ করা, নতুন ফাইল গঠন করে তা সংরক্ষণ করা, একটি ফাইল বা ফোল্ডারের প্রয়োজনীয় তথ্য কীভাবে কপি পেস্ট করা যায়। কম্পিউটারের ব্যাকগ্রাউন্ড কিভাবে পরিবর্তন করা যায়, কিভাবে সময় পরিবর্তন করা যায়।
২। টাইপিং
বর্তমানে ইংরেজি এবং বাংলা টাইপিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দারিয়েছে। টাইপ করার নিয়ম হল প্রতি মিনিটে ইংরেজিতে ৪০টি এবং বাংলায় ৩০টি শব্দ টাইপ করা। এখন বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্টের কাজ দেয়া হয়। অনেকেই সেই কাজের জন্য বিভিন্ন টাইপিস্টের কাছে যায়। সেই জন্য তাকে অনেক টাকা দিতে হয়। এখন আপনি যদি টাইপ করা শিখতেন তাহলে সময় এবং টাকা দুটোই সাশ্রয় হবে। বিভিন্ন অফিসগুলোতে নির্দিষ্ট করে বাংলা এবং ইংরেজি টাইপিং এর দক্ষতার কথা বলা থাকে তাই আপনি যদি একটি ভালো চাকুরী পেতে চান তাহলে টাইপিং শিখতে হবে। এখন অনলাইনে অনেকেই টাইপিং করে উপার্জন করছে। তাই দেরি না করে এখনি টাইপিং শিখে ফেলুন।
৩। কীবোর্ড শর্টকাট
কীবোর্ড শর্টকাট বলতে বোঝানো হচ্ছে মাউস এ ক্লিক না করে কীবোর্ডের সাহায্যে খুব দ্রুত কপি পেস্ট করা। কীবোর্ড শর্টকাট জানা থাকলে খুব সহজেই কোন কাজ অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা যায়। তাই কীবোর্ড শর্টকাটগুলো জেনে রাখলে আপনি দ্রুত কাজটি করতে পারবেন।
৪। ওয়ার্ড প্রসেসিং
ওয়ার্ড প্রসেসিং বলতে আমরা বিভিন্ন লিখালিখির কাজ বুঝে থাকি। মাইক্রোসফট অফিস ওয়ার্ড তাদের মধ্যে অন্যতম। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ডকুমেন্ট, বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা যায়। ৯০ ভাগের বেশি মানুষ এবং অফিসে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে। মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে বিভিন্ন ধরনের সমীকরণ, রাসায়নিক সংকেত, লেখা ছোটবড় করা যায়। আর প্রত্যেক মানুষের এই দক্ষতা অর্জন করা জরুরী কেননা বিভিন্ন অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করা হয় এই সফটওয়ারে।
৫। প্রেজেন্টেশনে দক্ষতা
প্রেজেন্টেশন হল কোন সেমিনার বা ক্লাস, কনফারেঞ্চ, বিভিন্ন প্রদর্শনীতে কোন একটি বিষয় নিয়ে বক্তার উপস্থাপনা। বর্তমানে প্রেজেন্টেশনের জন্য মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশানের পাওয়ার পয়েন্ট খুবই জনপ্রিয় একটি সফটওয়ার। এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপস্থাপনের কাজগুলো খুব সহজেই করা যায়। পাওয়ার পয়েন্ট ফাইলে অনেকগুলো স্লাইড থাকে । স্লাইডে বিষয়গুলো আলাদা করে বিভিন্ন ছবি, গান, ভিডিও যোগ করে উপস্থাপনাকে আর মনোমুগ্ধকর করে তোলা যায়। প্রোজেক্টরের মাধ্যমে স্লাইডগুলো দেখিয়ে পুরো বিষয়টি উপস্থাপন করা যায়। আর বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এই প্রেজেন্টেশন দক্ষতা খবই জরুরী। কম্পিউটার এমন একটি মাধ্যম যার মাধ্যমে খুব সহজেই এই দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব।
৬। গাণিতিক যুক্তি সমাধান
বর্তমানে গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য খাতায় করতে হয় না। মাইক্রোসফট কর্পোরেট অফিস গাণিতিক সমস্যা সমাধানের জন্য সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এর মধ্যে তথ্য প্রবেশ করিয়ে দিলে মুহূর্তেই সমাধান চলে আসে। আর এই জনপ্রিয় সফটওয়্যারটি হল এক্সেল। এক্সেলের মাধ্যমে ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাব নিকাশ , বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ বিল , শেয়ার বাজারের সুচক, অফিসে কর্মীদের কাজে আসার সময়, শিক্ষার্থীদের মার্কশিট ইত্যাদি কাজ করা যায়। এই দক্ষতা অর্জন করলে আপনি খুব সহজেই ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারবেন। বর্তমানে ডাটা এন্ট্রির কাজের চাহিদা প্রচুর তাই এটি আপনার কাজে আসবে।
৭। বেসিক কম্পিউটার হার্ডওয়্যার
বেসিক কম্পিউটার সম্পর্কে খুব ভাল ধারনা রাখা উচিত। বেসিক কম্পিউটার হার্ডওয়্যার বলতে কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে বুঝানো হচ্ছে। যা বিভিন্ন সফটওয়্যার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা জানা খুবই জরুরী। যেমন বিভিন্ন ধরনের ইনপুট আউটপুট ডিভাইস, র্যাম, হার্ডডিস্ক, মাদারবোর্ড, মাউস, কীবোর্ড ইত্যাদি কিভাবে কানেকশন দিতে হয় তা জেনে থাকা জরুরী। এছাড়াও কম্পিউটার কিভাবে ভাইরাস মুক্ত রাখতে হয় সেটা জানাও দরকার। এগুলো সম্পর্কে ধারনা থাকলে কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে খুব সহজেই ঠিক করা যায়।
৮। ইমেইল
প্রাচীনকালে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল চিঠি। চিঠির মাধ্যমে সংবাদ বা তথ্য আদান প্রদান করা হত। ফলে অনেক সময় লাগতো একটি চিঠি আসতে। বর্তমানে যোগাযোগের জন্য ইমেইল ব্যবহার করা হয়। অফিস থেকে শুরু করে আদালত পর্যন্ত কোথায় ব্যবহার হচ্ছে না ইমেইল। এই ইমেইলের মাধ্যমে খুব সহজেই বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত মানুষের কাছে। ইয়াহু, জিমেইল ফ্রি তে সেবা দিচ্ছে। এই ইহাহু বা জিমেইল এ একটি অ্যাকাউন্ট থাকা উচিত। তাই ইমেইল সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান থাকা উচিত।
৯। ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং সার্চ ইঞ্জিন
আধুনিক যুগে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইন্টারনেট ছাড়া কম্পিউটারের কথা কল্পনা করা যায় না। ইন্টারনেট ব্রাউজিং বলতে বোঝায় একটি ওয়েবসাইট কিভাবে ওপেন করা হয়। বর্তমানে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট ছাড়া মানব জীবন প্রায় অচল হয়ে পরেছে। তাই কম্পিউটার এ কিভাবে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে হয় সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সবকিছুই ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে গেছে। সবকিছু এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে খুজে বের করতে হয়। গুগল খুবই জনপ্রিয় একটি সার্চ ইঞ্জিন।সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে আমরা অনেক অজানা তথ্য খুঁজে পাই। তাই গুগল সম্পর্কে খুব ভাল জ্ঞান থাকা দরকার।
১০। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং দক্ষতা
নেটওয়ার্কিং এর সবচেয়ে কারজকরি মাধ্যম হল সোশ্যাল মিডিয়ার সাইটগুলো। এখানে বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে যোগাযোগ বাবস্থা স্থাপিত হয়। এর মাধ্যমে এসব মানুষের সাথে পরিচয় হওয়া সম্ভব। এসব মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে, কিভাবে নেগেটিভিটি এড়িয়ে চলা যায়, কি আচরন করতে হয় ইত্যাদিকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং স্কিল বলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাবসা থেকে শুরু করে পড়াশুনা করা যায়। এই দক্ষতাটি এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফেইসবুক, টুইটার, লিঙ্কডিন, পিন্টারেস্ট ইত্যাদি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। এগুলো তে অ্যাকাউন্ট খুলে কিভাবে কাজ করে তা জানা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
১১। প্রোগ্রাম ইন্সটল -আনইন্সটল করা
কম্পিউটার এ বিভিন্ন সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম ইন্সটল করা থাকে। কোনো কারনে প্রোগ্রামটি হারিয়ে গেলে বা আনইন্সটল হলে তা পুনরায় ইন্সটল কিভাবে করতে হয় তা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি। উইন্ডোজ কিভাবে দিতে হয়, এম এস অফিস, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদি সফটওয়্যার কিভাবে ইন্সটল- আনইন্সটল করতে হয় তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো জানা থাকলে আপনাকে সফটওয়ার ইন্সটল করার জন্য অন্যের সাহায্যের দরকার হবে না বরং আপনি অন্যের কম্পিউটারে সফটওয়্যার ইন্সটল করে টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
লিখেছেনঃ সরস্বতী রায়।