ডাটা সাইন্স এবং মেশিন লার্নিং কেন শিখবো?
যারা বর্তমান সময়ের জন্য সব থেকে উপযোগী একটি স্কিল ডেভেলপমেন্টের কথা ভাবছেন কিন্তু আসলে কি শিখবেন সেটা খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁদের জন্য ডাটা সাইন্স এন্ড মেশিন লার্নিং শেখাটা হতে পারে সব থেকে উপযুক্ত একটি সিদ্ধান্ত। তবে এই জিনিসটি শেখার জন্য কম্পিউটারের সাধারণ বিষয়গুলো চালনায় দক্ষতা থাকা আবশ্যক।
ডাটা সায়েন্স এখন প্রায় প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রিতে পপুলারিটি অর্জন করেছে। যেকোনো কাজেই ইফিসিয়েন্সি বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই ডাটা সায়েন্স। বলা যায় ডাটা সাইন্টিস্টদের প্রয়োজনীয়তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাঁদের জন্য প্রতিনিয়ত বিশাল কর্মক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
শুনলে অবাক হবেন, বর্তমান প্রযুক্তিগত যুগে বিশ্বব্যাপী ডাটা সায়েন্টিস্টের চাহিদা অন্য যেকোনো প্রযুক্তিগত স্কিল্ড ব্যাক্তিদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ভবিষ্যতে অন্যান্য অনেক পদের তুলনায় এই সেক্টরটিতে চাকরি সহজলভ্য এবং নিরাপদ হবে। এই সেক্টরে আমাদের দেশ একটু পিছিয়ে থাকলেও কিন্তু থেমে নেই।
বাংলাদেশে NBICT LAB ডাটা সায়েন্স এন্ড মেশিন লার্নিং এর উপরে গুনগত মান সম্পন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু রেখেছে। এই প্রতিষ্ঠান এ পর্যন্ত ডাটা সাইন্স ভিত্তিক বারোটিরও বেশি ভার্চুয়াল ওয়ার্কশপ (৪ শতাধিক প্রশিক্ষণ ক্লাস) সফলতার সাথে পরিচালনা করেছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে অংশগ্রহণকারী গবেষকগণ NBICT LAB এর শিখন পদ্ধতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
চলুন, ডাটা সায়েন্স এবং মেশিন লার্নিং সম্পর্কে কিছু জ্ঞান আহরণ করা যাক।
ডাটা সায়েন্স কী
ডাটা সায়েন্স হচ্ছে ডাটা নিয়ে গবেষণা তথা এনালাইসিসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে রেকর্ডিং, সংরক্ষণ এবং পুনবিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ডাটা সায়েন্স এর লক্ষ্য হচ্ছে সুগঠিত এবং অগঠিত তথ্য থেকে একটি ফলাফল বের করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ডাটা সায়েন্স কেন শিখবেন
কার্যক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ তথ্য উৎপন্ন হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করা দেশি বিদেশী কোম্পানি তথা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দিনে দিনে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। তা হোক সে ফাইন্যান্স, মার্কেটিং, রিটেইল, আইটি, ব্যাংক, ফার্মাসিউটিক্যালস্ কিংবা চিকিৎসা বা কৃষি ক্ষেত্র। বর্তমান প্রায় সব বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আয় বৃদ্ধি করতে ডাটা সায়েন্টিস্ট খুঁজছে। এর ফলে সারা বিশ্বে ডাটা সায়েন্টিস্ট এর ব্যাপক চাহিদা দেখা দিয়েছে। আইবিএম এটিকে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে চাহিদা সম্পন্ন পেশা হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশে ডাটা সায়েন্স এর অবস্থান
বাংলাদেশেও ডাটা সায়েন্স এর ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশে যে পরিমাণ ডাটা সায়েন্সে দক্ষ কর্মী দরকার তার মাত্র কয়েক শতাংশ এই মুহূর্তে কর্মরত আছেন। যেহেতু ডাটা সায়েন্স এর গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে, তাই ডাটা সায়েন্টিস্টের চাহিদাও বাড়ছে। একজন ডাটা সায়েন্টিস্টেকে অবশ্যই সুগঠিত অথবা অগঠিত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারতে হবে। এটা পারার জন্য তাদেরকে যথাযথ সিস্টেম সম্পর্কে জানতে হবে যেটা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে। ডাটা সায়েন্স এবং ডাটা সায়েন্টিস্টরাই বিশ্বের ভবিষ্যৎ।
সুখের খবর হলো, এই সেক্টরটি এমন যে, যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে যে কেউ একজন ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। যারা হাতে কলমে ডাটা সায়েন্স শিখতে চান তাদের জন্য NBICT LAB স্কিল ডেভেলপমেন্টের একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান।
এবার আসি মেশিন লার্নিং প্রসঙ্গে
বর্তমান যুগে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রযুক্তি দক্ষতার ক্ষেত্রে ওপরের দিকেই রয়েছে মেশিন লার্নিং বা এমএল-বিষয়ক দক্ষতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে মেশিন লার্নিং ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের মতো বিষয়গুলোতে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ ধরনের প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি।
মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি আমাদের অজ্ঞাতসারে জীবনকে দিনকে দিন সহজ করে তুলছে। আমরা দ্রুতই এ ধরনের প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি যখন ফোনে ভয়েস কমান্ড দেন বা ইন্টারনেটে ছবির খোঁজ করতে বলেন, মেশিন লার্নিং আপনার চাহিদা অনুযায়ী ফলাফল দেখাতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে প্রফেশনাল ব্যক্তিদের সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট লিঙ্কডইন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে আগামী বছর সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতার তালিকা প্রকাশ করেছে। লিঙ্কডইনের বার্ষিক ইমার্জিং জবস রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন তালিকার শীর্ষে শিল্প খাতে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ও ডেটা সায়েন্স পদের চাহিদা বাড়ছে বলে দেখা গিয়েছে, যা ভবিষ্যতেও বাড়বে।
মেশিন লার্নিং এর মতো আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স আগামী বছরগুলোতেও গুরুত্ব পাবে। প্রযুক্তি খাতের নেতৃত্বস্থানীয় পদগুলিতে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা প্রাধান্য পাবেন। যাঁরা এআই বিশেষজ্ঞদের টিম ম্যানেজমেন্ট, ডেটা সায়েন্স এবং উদ্ভাবনী পণ্য তৈরিতে দক্ষতা দেখাতে পারবেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবেন। পরবর্তী বছরগুলোতে যে দক্ষতাগুলো কাজে লাগবে তার মধ্যে একটি হচ্ছে অ্যাপ্লাইড মেশিন লার্নিং। পূর্বেই বলেছি বর্তমানে ডেটা সায়েন্সের কদর দ্রুত বাড়ছে। ডেটা ব্যবহার করে তা কাজে লাগানোর দক্ষতা দেখাতে পারলে তাদের চাহিদা অবশ্যই বেশি থাকবে।
মেশিন লার্নিং কী?
মেশিন লার্নিং হচ্ছে কম্পিউটারকে এমন একটি ক্ষমতা প্রদান করা যার জন্য সেটি আগে থেকে ওই বিষয়ক প্রোগ্রাম লেখা ছাড়াই শিখতে পারে। কম্পিউটারের নিজে থেকে শেখার ক্ষমতা থাকলে সেটি যেকোনো কিছুই করতে পারে খুব সহজে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যদি কম্পিউটারের খেলার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি তার জেতার হার বেড়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেই কম্পিউটারটি আসলেই শিখছে। মানে সে খেলতে খেলতে শিখছে, আর কম্পিউটারের নিজে থেকে এই শেখার ক্ষমতাটাকেই বলে মেশিন লার্নিং।
মেশিন লার্নিং’-এর মূল তত্ত্ব হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ ডেটা বা তথ্য-উপাত্ত থেকে কোনো নির্দিষ্ট তথ্যের প্যাটার্ন বা ‘মডেল’ সঠিকভাবে বের করা। এরপর সেটি ব্যবহার করে নতুন কোনো তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস করা, যেটি ‘ক্লাসিফিকেশন’ হিসেবে পরিচিত। কথা হচ্ছে, এই ক্লাসিফিকেশন কেন করা দরকার? উত্তর হচ্ছে—ধরুন আপনাকে বলা হলো এক, দুই ও পাঁচ পয়সার শ্রেণিবিন্যাস করতে, আপনি কীভাবে সেটি করবেন? একটি উপায় হচ্ছে, আপনি পয়সাগুলো তাদের পরিধি আর ওজন অনুযায়ী ভাগ করতে পারেন। কারণ, একেক পয়সার পরিধি আর ওজন একটু ভিন্নই হয়ে থাকে। এই শ্রেণিবিন্যাস জিনিসটি মানুষের জন্য হয়তোবা অনেক সহজ, কিন্তু একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের জন্য নয়। এই শ্রেণিবিন্যাস কোনো প্রোগ্রামারের বোঝার জন্য দরকার অনেক ডেটা, যা থেকে প্রোগ্রাম বুঝতে পারবে সঠিকভাবে পয়সার শ্রেণিবিন্যাস ও শনাক্তকরণ।
মেশিন লার্নিয়ের প্রয়োগের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে—স্পিচ রিকগনিশন, ইমেজ রিকগনিশন ও অনুমান (প্রেডিকশন)।
অনুমান: মেশিন লার্নিং ও আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স ব্যবহার করে কোনো বিষয়ে অনুমানের কাজে লাগানো যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার আগে কোনো ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ করবে কি না, তার পূর্বানুমান মেশিন লার্নিং দিয়ে বের করা যায়।
ইমেজ রিকগনিশন: মেশিন লার্নিং অ্যাপ্লিকেশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ হচ্ছে ছবি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় কাজ করা। মেডিকেল সেক্টরে ক্যান্সার কোষ সনাক্তকরণ মেশিন লার্নিং এর একটি মেইল ফলক। ফসলের রোগাক্রান্ত পাতার সনাক্তকরনেও মেশিন লার্নিং এর ব্যবহার দারুণভাবে কাজে লাগছে। NBICT LAB এর বিগত মেশিন লার্নিং এর ব্যাচে এটি শেখানো হয়েছে।
স্পিচ রিকগনিশন: সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে মানুষের কথা শুনে তা টেক্সটে রূপান্তর করতে পারে স্পিচ রিকগনিশন।
বর্তমানে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সাধারণ প্রতিষ্ঠানেও মেশিন লার্নিং প্রকৌশলীদের চাহিদা বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য কাজে লাগিয়ে তা থেকে প্রয়োজনীয় সুবিধা পেতে উৎসাহ দেখাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মেশিন লার্নিং প্রকৌশলী, ডেটা সায়েন্টিস্ট, এআই আর্কিটেক্ট, বিজনেস অ্যানালিস্ট ও পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে এ খাতের কর্মীদের।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, প্রথম আলো, রাইজিং বিডি এবং ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যম।